চকরিয়ায় কোন ভাবেই থামানো যাচ্ছে না মাতামুহুরি নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। এতে অনেক এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ইজারা ছাড়াই বালু উত্তোলনের কারণে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে রাজস্ব আয় থেকে। একটি চক্র বেপরোয়াভাবে নিয়মনীতি ও আইনের তোয়াক্কা না করেই স্থানীয় প্রশাসনের চোঁখ ফাকি দিয়ে প্রকাশ্যে চলছে এমন অবৈধ কর্মযজ্ঞ। তাদের ক্ষমতার দাপটে অসহায় প্রশাসন এ নিয়ে অনেকটা নীরব ভূমিকা পালন করছে। তাহলে বালুদস্যুদের থামাবে কে❓
সোমবার সরেজমিনে পৌরসভা ১ নম্বর ওয়ার্ডের আমান পাড়া এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, শক্তিশালী ড্রেজার ও শ্যালো মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। কোনো কোনো পয়েন্টে অস্থায়ী ভাসমান বেইসের উপর শ্যালো মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। মাতামুহুরি নদী থেকে আগ্রাসীভাবে বালু উত্তোলনের পর ফসিল জমিতে রাখার কারনে পরিবেশ বিপর্যয় ও চাষাবাদ ব্যাহত হওয়া সহ বহুমুখী সমস্যা দেখা দিয়েছে।
অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে নদীতীরের ফসলি জমিতে দীর্ঘসময় ধরে ফসলের জমিতে পাহাড়ের মত করে বালি স্তুপ করে রেখে জমির উর্বরতা নষ্ট করে ফেলায় সবজিসহ রকমারী ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বালু উত্তোলনের কারনে নদীর দুই তীরের ভাঙন প্রকট আকার ধারণ করা, নদীর তলদেশে চোরাবালি সৃষ্টি হওয়া ছাড়াও বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে। ভূ-গর্ভ থেকে বালু উত্তোলনের ফলে আগামী বর্ষায় ভয়াবহ ভূমিধসের আশঙ্কা ছাড়াও বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে মাতামুহুরী নদীর পাশে কয়েক হাজার বসতবাড়ি। পরিবেশ বিধ্বংসী এসব কর্মকান্ড প্রকাশ্যে চললেও এসব বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর, উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন ধরনের তৎপরতা নেই। এতে প্রভাবশালী সিন্ডিকেটগুলো দিন-রাত সমানে এই কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
জানা গেছে, পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের আমান পাড়ায় মাতামুহুরী নদীতে অসংখ্য ড্রেজার এবং শ্যালো মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে তোলা হচ্ছে বালু। এতে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে, পাশাপাশি ব্যাপকভাবে ক্ষতি হচ্ছে মাতামুহুরী নদী তীরের ফসলি জমির। আবার ফসল ফলানো জমির ওপর একের পর এক বালুর স্তুপ করে রাখায় চাষাবাদও হচ্ছে না বিপুল পরিমাণ জমিতে। এই অবস্থায় নিজেদের জমিতে ফসল ফলাতে না পেরে প্রান্তিক কৃষকেরা মাথায় হাত ওঠেছে
পৌরসভা ১ নম্বর ওয়ার্ডের নাম অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা জানান, মাতামুহুরি নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে প্রভালশালী একটি সিন্ডিকেট। তবে সরকার পতনের কয়েকদিন পর থেকে দিন-রাত নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে।
স্থানীয় আরো কয়েকজন জানান, বালুদস্যুরা এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তাদের বাধা দেয়ার সাহস পায় না। এরা অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে মাতামুহুরি নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে। প্রতিদিন তারা শত শত ট্রাক বালু উত্তোলন ও বিক্রি করে লাভবান হলেও এলাকার ফসলি জমি, রাস্তা ও বিভিন্ন স্থাপনা হুমকির মুখে পড়েছে। এতে দিন দিন ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা জানায়, গ্রামের রাস্তায় ডাম্পার ট্রাক চলাচলের কারণে প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার সময় ও স্কুল ছুটির শেষে বাসায় ফেরার সময় দুর্ঘটনার ভয়ে থাকি। আর ধুলাবালুর কারণে আমাদের শ্বাস-নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
এ বিষয়ে বালু উত্তোলনকারীদের কাছ থেকে জানতে চাইলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, প্রায় প্রতিদিনই অভিযান পরিচালনা করছি। ড্রেজার মেশিন জব্দ ও পাইপগুলো ভেঙে নষ্ট করা হচ্ছে। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।