কক্সবাজার-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম (৬৫) কে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে আত্মগোপনে চলে যান জাফর আলম। তিনি দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর ২৭ এপ্রিল বিকালে ঢাকার ধানমন্ডি এলাকা থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেফতার করেন।
তার বিরুদ্ধে চকরিয়া, পেকুয়া, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় হত্যা, ছাত্র-জনতার উপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে প্রায় ২০টির মতো মামলা হয়েছে ।
জাফর আলম কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরসভা ৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৃত লাল মোহাম্মদ সওদাগরের পুত্র।
জানা যায়, বিগত ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরআগে চকরিয়া পৌরসভার মেয়র ও চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেন। ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্ব›দ্বীতা করে কল্যাণ পার্টির চেয়ারমন্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিমের কাছে পরাজিত হন।
সর্বশেষ চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্ব›দ্বীতা করে ফজলুল করিম সাঈদীর কাছে ধরাশয়ী হন তিনি। জাফর আলম এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর বেপরোয়া হয়ে উঠেন। চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলায় চিংড়ি ঘের দখল, সরকারি জমি দখল, নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য, পাহাড় ও নদীর অবৈধ বালু উত্তোলন, সরকারি বরাদ্দ লুট, চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তার করে বির্তকিত কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েন। তিনি বিগত ১৫ বছরে বিএনপি-জামায়াতকে দমানোর চেয়েও বেশি নির্যাতন করেছেন নিজ দলের নেতাকর্মীদের। তার হাত থেকে রেহায় পায়নি আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও। অসংখ্য নেতাকর্মীদের হামলা নির্যাতন ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করেছেন।
অভিযোগ রয়েছে, বিগত ১৫ বছরে নানা অপকর্ম করে শতশত কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন জাফর আলম। শূন্য থেকে উঠে আসা জাফর মালিক হয়েছেন গাড়ি, বাড়ি, মার্কেট ফ্ল্যাট ও জমির। একসময় অর্থ সংকটে সংসার চালাতেও হিমশিম খাওয়া জাফর আলম চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলা সদরে কয়েকটি শপিং কমপ্লেক্সসহ অনেক স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। এছাড়া চকরিয়া উপকূলীয় চিংড়ি জোনের প্রায় ২০ হাজার একর চিংড়িঘের তার বাহিনীর দখলে ছিলো। ২০২১ সালে বর্তমানে সরকারের প্রধান উপদেষ্ঠা ড. মোহাম্মদ ইউনুছের মালিকানাধীন ৩০০ একরের চিংড়িঘেরটি দখল করে করেছিলেন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর চিংড়িঘেরটি দখলমুক্ত হয়েছে। এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য আওয়ামী লীগের বাইরে “জাফর লীগ” একটি বলয় গড়ে তুলেন। এই জাফর লীগ দিয়ে অপরাধের সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করেছেন। জাফর আলমের এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতেন তার ব্যক্তিগত পিএস নুরুল আমিন চৌধুরী, ভাতিজা জিয়াবুল হক, ভাগিনা মিজানুর রহমান, ডুলাহাজারা ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর, সাহারবিল ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান নবী হোসাইন চৌধুরী ও চিরিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জামাল হোছাইন চৌধুরী, মগনামা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ওয়াসিম। এরমধ্যে সাহারবিল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নবী হোছাইন চৌধুরী আটক হয়ে কারাগারে রয়েছেন। তার অন্য সহযোগিরা বেশিরভাগ বিদেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তারা বিভিন্ন ইউনিয়নে জাফর আলমের নাম ব্যবহার করে সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণে রাখতেন।
গত ৩ ও ৪ আগস্ট জাফর আলমের নেতৃত্বে চকরিয়া পৌরশহরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে গুলিবর্ষণ করে। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালালে তিনিও আত্মগোপনে চলে যান। দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর ২৭ এপ্রিল ঢাকার ধানমন্ডির এলাকা থেকে ডিবি পুলিশের হাতে আটক তিনি। ##