দেশ রিপোর্ট ডেস্ক:
প্রায় ৪ হাজার ২৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত খুলনা-মোংলা রেলপথে চলাচল করছে যাত্রীবাহী মাত্র একটি ট্রেন। অথচ যাত্রী ও পণ্যবাহী একাধিক ট্রেন চলাচলের জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল এই রেলপথ। যাত্রীবাহী আরেকটি ও পণ্যবাহী একাধিক ট্রেন চলাচল কবে শুরু হবে তা বলতে পারছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে খুলনাবাসীর মধ্যে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, মোংলা থেকে খুলনার ফুলতলা পর্যন্ত নতুন রেলপথ উদ্বোধন করা হয় ২০২৩ সালের ১ নভেম্বর। উদ্বোধনের ৭ মাস পর গত ১ জুন থেকে পুরাতন ইঞ্জিন ও বগি দিয়ে শুরু হয় যাত্রীবাহী ‘মোংলা কমিউটার’ নামে একটি ট্রেন চলাচল। ট্রেনটি মঙ্গলবার বাদে সপ্তাহে ৬ দিন মোংলা থেকে খুলনা হয়ে যশোরের বেনাপোল পর্যন্ত যাওয়া-আসা করে। ট্রেনে আসন সংখ্যা ৬৭৬টি।
রোববার (২০ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টায় খুলনার মোহাম্মদনগর রেল স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, বেনাপোল থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনটিতে অনেক যাত্রী রয়েছেন। এই স্টেশন থেকেও শতাধিক যাত্রী ট্রেনে ওঠেন। কিন্তু সবাই সিট পাননি।
লিয়াকত হোসেন ও সাইফুল আলম নামের দুইজন যাত্রী বলেন, শুনেছিলাম এই রুটে যাত্রীবাহী একাধিক ট্রেন চলবে। কিন্তু চলছে মাত্র একটি। যাত্রীদের চাহিদা থাকলেও আরেকটি ট্রেন চলাচল নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এর ফলে বিপুল অঙ্কের টাকায় নির্মিত এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য অর্জিত হচ্ছে না।
মোহাম্মদনগর রেল স্টেশনের বুকিং সহকারী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, এই রুটে যাত্রীদের আরও ট্রেনের চাহিদা আছে। কিন্তু দিনে একবার নির্দিষ্ট সময় ছাড়া যাত্রীরা ট্রেনে যাতায়াত করতে পারছে না।
এদিকে প্রকল্পের আওতায় মোংলা বন্দরের ভেতরেও রেলপথ বসানো হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল মোংলা বন্দরের সঙ্গে খুলনা এবং যশোরের বেনাপোল বন্দর হয়ে ভারতে পণ্য আনা-নেয়ার জন্য পণ্যবাহী ট্রেন চালানো হবে। এছাড়া ট্রেনে করে খুলনা থেকে মোংলা বন্দরে পণ্য আনা-নেয়া করা হবে। কিন্তু তাতে কোনো অগ্রগতি নেই।
এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রেলপথ তৈরি করে গত সাড়ে ৪ মাস ধরে মাত্র একটি ট্রেন চালানো হচ্ছে। এই রুটে দ্রুত যাত্রীবাহী অন্তত আরেকটি এবং পণ্যবাহী প্রয়োজনীয় সংখ্যক ট্রেন চালু করা প্রয়োজন। তা না হলে এতো অর্থ ব্যয় কোনো কাজে আসবে না।
এ ব্যাপারে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক আহম্মদ হোসেন মাসুম বলেন, রেলওয়ের জনবল, ইঞ্জিন ও কোচ সংকট রয়েছে। সে কারণে এই রুটে আপাতত যাত্রী ও পণ্যবাহী নতুন ট্রেন চালু করা যাচ্ছে না। এসব সংকট নিরসন করে দ্রুত আরও ট্রেন চালু করার জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করছে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ‘খুলনা-মোংলা রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের’ কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে ভারতীয় দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লার্সেন অ্যান্ড টুবরো এবং ইরকন ইন্টারন্যাশনাল। এ প্রকল্পে ব্যয় হয় ৪ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। নির্মাণ কাজ শেষের পর ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর এই রুটে পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম ট্রেন চালানো হয়। নতুন রেলপথে স্টেশন রয়েছে ৮টি। মোংলা থেকে খুলনার ফুলতলা পর্যন্ত রেলপথের দৈর্ঘ্য প্রায় ৬৫ কিলোমিটার। আর ফুলতলা থেকে বেনাপোল পর্যন্ত ৭৪ কিলোমিটার রেলপথ আগেই ছিল।
Source: Channel 24 news